১৮ মে ২০২৪, ০৪:০৮ অপরাহ্ন, ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি, শনিবার, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
চাঁদপাশায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফারজানা বিনতে ওহাব এর উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত রিকশাচালককে পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়া সেই পুলিশ সদস্য ক্লোজড বরিশালে স্বামীর জমানো টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে উধাও প্রবাসীর স্ত্রী তেঁতুলিয়া হাসপাতালে অকেজো মালামাল টেন্ডারে ঘাবলা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি দর্শনায় আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের উদ্যোগে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় ও সংবর্ধনা বানারীপাড়ায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক মাস্টারের দাফন সাংবাদিক সোহেল সানি ও রাহাদ সুমনের নানি কোহিনুর বেগমের ইন্তেকাল প্রধানমন্ত্রী চান বাংলাদেশের সকল মানুষ এক ছাতার নিচে বাস করবে-পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী আগৈলঝাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত জীবননগরে সড়ক দুর্ঘটনায় হাতপাখা বিক্রেতার মৃত্যু
দেশে কমছেই না মাদকের বিস্তার

দেশে কমছেই না মাদকের বিস্তার

অনলাইন ডেস্ক ‍॥ প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার মাদক বেচাকেনা হয়। যার অধিকাংশ ক্রেতাই শিক্ষিত যুবক। দেশে সংঘটিত খুনের ৮০ শতাংশের সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে মাদকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। নতুন বছরে মাদকবিরোধী চলমান অভিযানের গতি বাড়াতে সরকার জঙ্গি স্টাইলে মাদক নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছে।

এছাড়া মাদক মামলার বিচার দ্রম্নত করতে পৃথক আদালত স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। সে সঙ্গে নিয়মিত আদালতে মাদক মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। তারপরও থামছে না মাদকের বিস্তার। কাঁচা টাকা আর চাহিদা বাড়ার কারণে মাদকের আগ্রাসন ঠেকানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অপারেশনস ও গোয়েন্দা শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাদক আইনে প্রায় ৮৬ হাজার মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি রয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত ১৭ হাজারের বেশি মামলায় আসামির সংখ্যা সাড়ে ১৮ হাজার। আর ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৩ হাজারের বেশি অভিযান চালায়। সেখানে মামলা ও আসামির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ হাজার। এসব মামলার মধ্যে প্রায় পৌনে ৬শ’ আসামির সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছে ৯শ’ জন।

মাদক সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কথা হয় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, মাদক মামলার বিচার দ্রম্নত করতে আমরা পৃথক আদালত স্থাপনের চেষ্টা করছি। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। তাই প্রতিটি আদালতকে মাদক সংক্রান্ত মামলার দ্রম্নত বিচার কাজ শেষ করতে আমি নির্দেশ দিয়েছি।

আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি লিখিত নির্দেশনাও প্রতিটি আদালতে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, একটি মামলার রায় ঘোষণার আগে অনেক কিছুই বিচার্য বিষয় থাকে। সাক্ষীসহ নানা বিষয় থাকায় অনেক সময় হয়তো ইচ্ছা থাকলেও মাদক সংক্রান্ত মামলার দ্রম্নত রায় দেওয়া সম্ভব হয় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সারাদেশে মাদকবিরোধী যুদ্ধ পরিচালনা করছি। সেই যুদ্ধে অনেক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

আত্মসমর্পণ করেছেন চার শতাধিক। আগামী ২০২২ সালে মাদকবিরোধী যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। কারণ মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি রাতারাতি বিত্তশালী হওয়ার হাতছানির কারণেই মাদকের বিস্তার কমানো যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবার থেকে আসে।

তাদের কাছে টাকাও থাকে। সেই টাকাই তাদের টার্গেট। তবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়েও মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। জাতির মেরুদন্ড ভেঙে দিচ্ছে মাদক। হালে আইস ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাদকের বিস্তার লাভ করছে। মাদকের কারণে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে প্রতিটি খুনের সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে মাদক ব্যবহৃত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান যায়যায়দিনকে বলেন, সারাদেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। নতুন বছরে নতুন কৌশলে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নিরোধ ও গবেষণা শাখার তথ্য মতে, দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা আড়াই কোটি। যার মধ্যে এক কোটি মাদকাসক্ত।

তারা প্রতিদিনই মাদক সেবন করে। বাকি দেড় কোটি অনিয়মিত মাদকসেবী। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার মাদকের লেনদেন হয়। মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ইয়াবা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল যায়যায়দিনকে বলেন, মাদকের জন্য পৃথক আদালত না থাকায় গত দুই যুগ ধরে সারাদেশে হাজার হাজার মাদক মামলা ঝুলে আছে। মাদকের জন্য পৃথক আদালত স্থাপনের জন্য আইনমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। মাদকের জন্য পৃথক আদালত করার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, মাদকের অপব্যবহার রোধে ২০১৩ সালের পর নতুন করে কোনো বার বা ক্লাবের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মাদক নির্মূলে সমন্বিত কৌশল ঠিক করা হয়েছে। সম্মিলিতভাবে সারাদেশে মাদকবিরোধী অল আউট অপারেশন শুরু হবে। দেশের ৬৮টি কারাগারের মধ্যে ৩টি জেলখানায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের কথা থাকলেও আপাতত তা স্থগিত করা হয়েছে। কারাগারে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, সে বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে। তবে কারাগারের বাইরে সরকারিভাবে ৪টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৫০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্রটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। সারাদেশে বেসরকারিভাবে ৩৬৩টি মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মানোন্নয়ন করতে মনিটরিং অব্যাহত আছে। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার। অথচ ৮৬ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪ শতাংশেরও বেশি মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রায় এক লাখ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সারাদেশের মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠনের কাজ অব্যাহত আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ইতোমধ্যেই ঢাকা মহানগর পুলিশের ৪০ সদস্য চাকরিচু্যত হয়েছে আর অন্তত ৫০ জনের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

ৠাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে জানান, তারা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। যুদ্ধে অনেক মাদক ব্যবসায়ী গোলাগুলিতে মারা গেছেন। আবার অনেকেই আত্মসমর্পণ করেছেন। তারপরও অল্প সময়ে বেশি টাকার মালিক হওয়ার লোভে অনেকেই নতুন করে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। নতুন নতুন কৌশলে মাদক আনছে। ফলে মাদকের বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডক্টর জিয়া রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, সন্তানদের মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে প্রথমেই পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। পরিবারে শান্তিশৃঙ্খলা অথবা পারিবারিক বন্ধন সুন্দর না থাকলে সন্তানদের মাদকাসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, রাত জাগছে কি না বা কার সঙ্গে মিশছে তা খেয়াল রাখতে হবে। মাদকের বিস্তাররোধ করা সম্ভব না হলে খুন, রাহাজানি, ডাকাতি, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019